Logo
Logo
×

তথ্যপ্রযুক্তি

সূর্যের সবচেয়ে কাছে গিয়ে ইতিহাস গড়ল নাসার মহাকাশযান

Icon

ঢাকা টুডে ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ এএম

সূর্যের সবচেয়ে কাছে গিয়ে ইতিহাস গড়ল নাসার মহাকাশযান

সূর্যের এত কাছে গিয়েও ফিরে আসা যায়, এমনটা এর আগে হয়তো নাসার বিজ্ঞানীরাও ভাবতে পারেননি। তবে নাসার মহাকাশযান ‘পার্কার সোলার প্রোব’ ঠিক সেটাই করে দেখাল। মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছতে পেরেছে এই মহাকাশযানটি। শুধু যে পৌঁছতে পেরেছে তাই-ই নয়, মহাকাশযানটি সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডল থেকে অক্ষত অবস্থায় সফলভাবে ফিরেও আসতে পেরেছে।
গত ২৪ ডিসেম্বর সোলার প্রোবটি সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার পর প্রতিকূল পরিবেশের কারণে নাসার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তবে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টায় (জিএমটি সময় সকাল ৫টা) বিজ্ঞানীরা ‘পার্কার সোলার প্রোব’ থেকে একটি সিগন্যাল পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
এর অর্থ হচ্ছে সূর্যের সবচেয়ে কাছে গিয়ে এর প্রচণ্ড তাপ ও চরম বিকিরণ সহ্য করেও অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসতে পেরেছে মহাকাশযানটি। নাসা জানিয়েছে, মহাকাশযানটি নিরাপদ আছে এবং স্বাভাবিকভাবে কাজও করছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে মহাকাশযানটি সূর্যের কত কাছে পৌঁছতে পেরেছিল?
নাসা জানাচ্ছে, সোলার প্রোবটি যেখানে পৌঁছতে পেরেছে সেখান থেকে সূর্য পৃষ্ঠের দূরত্ব ৩৮ লাখ মাইল (৬১ লাখ কিলোমিটার)। অর্থাৎ, সূর্যের ৩৮ লাখ মাইলের মধ্যে যেতে পেরেছে এই মহাকাশযানটি।
প্রোবটি সূর্যের কতটা কাছে পৌঁছতে পেরেছে এ সম্পর্কে নাসার হেড অব সায়েন্স ডা. নিকোলা ফক্স বিবিসি’কে বলেন, ‘আমরা সূর্য থেকে ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল দূরে আছি। যদি আমি সূর্য ও পৃথিবীকে এক মিটার দূরত্বে রাখি, তবে পার্কার সোলার প্রোব সূর্য থেকে মাত্র চার সেন্টিমিটার দূরে। তাই এটি সত্যিই খুব কাছাকাছি।’
অর্থাৎ, পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব যেখানে ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল, সেখানে নাসার পার্কার সোলার প্রোবটি সূর্যের মাত্র ৩৮ লাখ মাইল দূরে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে! উল্লেখ্য পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ২ লাখ ৩৮ হাজার মাইল (২,৩৮,৮৫৫ মাইল)।
ইতিহাসে সূর্যের সর্বনিম্ন দূরত্বে পৌঁছে প্রোবটিকে সহ্য করতে হয়েছে ১ হাজার ৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। পাশাপাশি প্রচণ্ড বিকিরণেরও সম্মুখীন হতে হয়েছে এই মহাকাশযানটিকে। এমন প্রতিকূল পরিবেশ সাধারণ মহাকাশযান পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তবে সোলার প্রোবে রয়েছে ১১.৫ সেন্টিমিটার (৪.৫ ইঞ্চি) পুরু কার্বন-মিশ্রিত একটি ঢাল বা পর্দা- যেটা সূর্যের প্রচণ্ড তাপ ও বিকিরণ থেকে মহাকাশযানটিকে সুরক্ষিত রেখেছে।  
নাসা’র তৈরি পার্কার সোলার প্রোবটি মহাকাশে যাত্রা শুরু করে ২০১৮ সালে। এখন পর্যন্ত এটি ২১ বার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করেছে এবং প্রতিবার একটু একটু করে সূর্যের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এবারে প্রদক্ষিণ করার সময় প্রোবটি  সূর্যের ৩৮ লাখ মাইলের মধ্যে পৌঁছতে পেরেছে।
প্রোবটিতে সুরক্ষা ঢাল বা পর্দা থাকলেও মহাকাশযানটিকে সূর্যের কাছাকাছি পৌঁছে দিতে আরেকটি কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। আর তা হচ্ছে প্রোবটির প্রচণ্ড গতি। ঘন্টায় ৪ লাখ ৩০ হাজার কিলোমিটার গতিতে ছুটতে সক্ষম এই মহাকাশযানটি। অর্থাৎ এই গতিতে লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক যেতে সময় লাগবে মাত্র ৩০ সেকেন্ড। কোনো সন্দেহ নেই, মানুষের তৈরি সবচেয়ে দ্রুতগতির যন্ত্র হচ্ছে পার্কার সোলার প্রোব।
এই গতিকে কাজে লাগিয়েই সূর্যের বায়ুমণ্ডলে দ্রুত ঢুকে আবার দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারে প্রোবটি। মূলত এই কৌশলেই সূর্যের এতটা কাছে যেতে পেরেছে নাসার এই অভিনব মহাকাশযান।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

ঢাকা টুডের একটি প্রকাশনা

অনুসরণ করুন