ছবি : সংগৃহীত
সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় হারের বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি বাংলাদেশ। গত বুধবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে আক্ষেপ ঘোচানোর সম্ভাবনা জাগিয়েও পারেননি টাইগাররা। ব্যাটিং বিপর্যয়ের খেসারত দিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে পিছিয়ে পড়েছে ১-০ ব্যবধানে। একই ভেন্যুতে পরের দুই ম্যাচ হওয়ায় বাংলাদেশ দল ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি নাÑ সে প্রশ্নই বড় হয়ে উঠেছে। তবে মেহেদী হাসান মিরাজ সিরিজে ফেরার ম্যাচে স্বপ্ন দেখছেন সিরিজ জয়ের। টাইগারদের সহ-অধিনায়কের মতে, সিরিজ জয়েরও সুযোগ আছে।
শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এখন পর্যন্ত ৯ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ দল। ৬ ওয়ানডে ও ৩ টি-টোয়েন্টির কোনোটিতে আসেনি জয়। সেই গেরো কাটানোর লক্ষ্যে আজ শনিবার বিকাল ৪টায় সিরিজে দ্বিতীয়বার আফগানদের মুখোমুখি হবে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। সিরিজ জয়ে চোখ রেখে এই ম্যাচকেই গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। গতকাল শুক্রবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে মিরাজ বলেছেন, ‘আমাদের এখনও সুযোগ আছে। একটা ম্যাচ হেরেছি, এখনও দুটি ম্যাচ আছে। দুটি ম্যাচ চিন্তা না করে পরের ম্যাচটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু আমরা একটু ব্যাকফুটে আছি।’
প্রথম ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের দেওয়া ২৩৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় এক পর্যায়ে ২ উইকেটে ১২০ রানে জয়ের পথেই ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পরে আর ২৩ রান তুলতেই বাকি ৮ উইকেট হারিয়ে ৯২ রানে হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে শান্ত ব্রিগেড। এমন হারের জন্য জন্য উইকেটকে দুষেছেন টাইগার অলরাউন্ডার। মিরাজের ভাষায়, ‘২০ ওভারের পর বল যখন পুরোনো ও নরম হয়ে গেল, হঠাৎ করে টার্ন শুরু হয়ে গেল বেশি। আমি আর শান্ত মাঝখানে খুব সংগ্রাম করছিলাম, সেট হওয়ার পরও। দুজন যেভাবে সেট ছিলাম, একজনের ফিনিশ করা উচিত ছিল। হঠাৎ করেই উইকেট এমন টার্নিং (বাঁক) হচ্ছিল, স্লো টার্নিং হচ্ছিল, সোজা আসছিল। আগে থেকে ধারণা করা যায়নি কোন বল সোজা আসবে, কোন বল বাঁক নেবে।’ তবে মিরাজ নিজেদের ভুলও স্বীকার করেছেন, ‘ওই সময়ে আমরা ভুল করেছি। শান্তও ভুল করেছে। আমরা এটা নিয়ে কথা বলেছি। এই উইকেটে আমার মনে হয় সেট ব্যাটসম্যানদের (ম্যাচ) শেষ করা উচিত ছিল।’
আফগান-জুজুর কারণে এভাবে হারতে হলোÑ এমনটা ভাবতে নারাজ মিরাজ, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে তো অনেকবার জিতেছি। ওয়ানডেতে বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ জিতেছি। দেশের মাটিতে সিরিজ জিতেছি। একটা ম্যাচ হেরে যাওয়ায় সব চলে গেছে, এমন কিছু না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিটি দল ভালো মানের, কখনও কোনো দলকে ছোট বলতে পারবেন না। আমরা চেষ্টা করছি। একটা ম্যাচ খারাপ হয়ে গেছে।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ এই সংস্করণে সর্বশেষ খেলেছে গত মার্চে। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেবার ২-১ ব্যবধানে সিরিজে জিতেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে হারের জন্য নিজেদের চেনা ফরম্যাটে লম্বা সময় পর খেলার ব্যাপারটিই সামনে এনেছেন মিরাজ, ‘অনেক দিন পর আমরা ওডিআই খেলেছি। সাত-আট মাস আগে খেলেছি। সবার ভেতরে ওই জিনিসটাও একটু কাজ করছিল যে, অনেক দিন পর আমরা ওডিআইতে খেলছি, প্রস্তুতিটা সেভাবে নিয়েছি। আশা করি, যেহেতু অনেক দিন পর খেলেছি, এই মাঠের ব্যাপারে একটা ধারণা হয়েছে। ভালো মোমেন্টাম কীভাবে নিতে হবেÑ সেটা অনুশীলন করছি।’
প্রথম ওয়ানডেতে নিজের বোলিং নিয়েও সন্তুষ্ট নন মিরাজ, ‘পেস বোলাররা খুব ভালো বোলিং করেছে। দারুণ শুরু করেছে। তবে আমার কাছে যতটা প্রত্যাশা ছিল, ততটা পূরণ করতে পারিনি। যেমন ধরুন, মাঝের ওভারগুলোয় আমি ও রিশাদ যদি দুটি উইকেট বের করতে পারতাম, তাহলে আমাদের জন্য সহজ হতো। হয়তো রান কম দিয়েছি, কিন্তু আমার কাছে দল উইকেট প্রত্যাশা করে। কারণ, দলে আমার ভূমিকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
অসুস্থতার কারণে দলে নেই লিটন দাস। প্রথম ম্যাচে হারের সঙ্গে বাংলাদেশ শিবিরে দুঃসংবাদ বয়ে এনেছেন মুশফিকুর রহিম। আঙুলে চোট পাওয়ায় এই সিরিজের বাকি দুটি ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছেন অভিজ্ঞ এই উইকেটকিপার ব্যাটার। মুশফিকের জায়গায় দলে আসতে পারেন অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা জাকের আলী অনিক। সিরিজ সমতায় আনতে চাওয়া ম্যাচে জাকেরকে শুভকামনা জানিয়ে রেখেছেন মিরাজ, ‘জাকেরের জন্য শুভকামনা, ভালো একটা সুযোগ ওর জন্য। যদি শতভাগ দিতে পারে, ক্যারিয়ারের জন্যও ভালো, দেশের জন্যও ভালো।’
সেই ভালোর শেষটা ভালো করতে মরিয়া মিরাজ-শান্তরা। তিন ম্যাচের সিরিজের দ্বিতীয়টি বাংলাদেশের সামনে এখন সিরিজে যেমন ফেরার, তেমনি রক্ষারও। আগামী ১১ নভেম্বরের ম্যাচকে অর্থবহ করাতেই তাই চোখ মিরাজদের।