মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশে যে-সব নামে ডাকা হয় সেগুলোকে ইসমে আজম বলে। ‘ইসম’ অর্থ হলো নাম আর ‘আজম’ অর্থ মহান বা শ্রেষ্ঠ। আল্লাহকে ডাকার জন্য অসংখ্য গুণবাচক নাম আছে। এগুলোকে একত্রে ‘আল আসমাউল হুসনা’ বলা হয়। পবিত্র কুরআনের চারটি আয়াতে আল আসমাউল হুসনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
হাদিসে আল্লাহর ৯৯টি নামের কথা বলা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলার ৯৯টি নাম আছে। যে ব্যক্তি এ নামগুলো মুখস্থ করবে, সে জান্নাতে যাবে। (বুখারি, হাদিস : ২৭৩৬, ৭৩৯২; মুসলিম, হাদিস : ২৬৭৭)
ইসমে আজমের মাধ্যমে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা কবুল করেন, বান্দার যেকোনো চাওয়া আল্লাহ তাআলা পূরণ করেন এবং যেকোনো বিপদাপদ দূরীভূত করেন। আল্লাহ তাআলার উক্ত নামগুলোর মধ্যে কোনটি ইসমে আজম সে সম্পর্কে কয়েকটি হাদিসে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা আছে।
ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.)- কে ইসমে আজম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ‘আদ-দুররুল মুনাজ্জাম ফিল ইসমিল আজম’ নামক গ্রন্থ রচনা করেন।
এ গ্রন্থে তিনি ইসমে আজমের ব্যাপারে ২০টি মতামত উল্লেখ করেছেন। কেউ কেউ ইসমে আজম ৪০ প্রকারের হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন। কাসিম (রহ.) বলেন, আল্লাহর ইসমে আজম হলো যার মাধ্যমে দোয়া করলে তা কবুল হয়, তা তিনটি সুরায় আছে। সুরা বাকারাহ, সুরা আলে ইমরান ও সুরা ত্ব-হা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৮৫৬)
অন্য বর্ণনায় আছে, ইসমে আজম উক্ত তিন সুরার নিম্নোক্ত তিনটি আয়াতে আছে।
১. সুরা বাকারাহর ২৫৫ নম্বর আয়াত তথা আয়াতুল কুরসিতে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ, তিনি ছাড়া সত্যিকার মাবুদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী।’
২. সুরা আলে ইমরানের প্রথম দুই আয়াতে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আলিফ, লাম, মীম। আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো সত্যিকার মাবুদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী। ’
৩. সুরা ত্ব-হার ১১১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘চিরঞ্জীব চিরস্থায়ীর সম্মুখে সবাই হবে অধোমুখী। ’ (আল মুসতাদরাক আলাস সহীহায়ন, ১/৫০৬)
ইসমে আজম সম্পর্কে হাদিসে বিভিন্ন বর্ণনা আছে। যেমন : এক হাদিসে এসেছে, আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে বসা ছিলাম, তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিল। যখন সে রুকু, সিজদা ও তাশাহুদ পড়ে দোয়া করতে শুরু করল তখন সে তার দোয়ায় বলল,
‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্না লাকাল হামদ, লা ইলাহা ইল্লা আনতাল মান্নানু বাদিউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম, ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়্যুম ইন্নি আসআলুকা। ’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি এই অসিলায় যে-সব প্রশংসা তোমারই, তুমি ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই। তুমি পরম অনুগ্রহ দাতা, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। হে মহিমাময় এবং মহানুভব, হে চিরঞ্জীব অবিনশ্বর! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। (নাসাঈ, হাদিস : ১৩০০; তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৪)
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, (ইসমে আজমের) যতগুলো বর্ণিত হাদিস আছে তার মধ্যে এটি সবচেয়ে বিশুদ্ধ। আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসমে আজম এ দুটি আয়াতে আছে : এক. তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি অতি দয়ালু ও মেহেরবান। (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৬৩)
দুই. সুরা আলে ইমরানের প্রথমাংশ, আলিফ-লাম-মীম, তিনিই সেই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৯৬)
ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) বলেন, আমি ইমাম আবু হানিফা (রহ.) থেকে শুনেছি, আল্লাহ তাআলার ইসমে আজম হলো ‘আল্লাহ’ (জাল্লাজালালুহু)। কেননা এটি তাঁর সত্তাগত নাম। কোরআন মজিদে এই নামটিই দুই হাজার ৬৯৭ বার এসেছে। আসমাউল হুসনার মধ্যে তার অন্য কোনো নাম এত বেশি উল্লেখ করা হয়নি।
আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) বলেন, ইসমে আজম হলো ‘আল্লাহ’ শব্দ। তবে শর্ত হলো তা পূর্ণ একাগ্রতা ও ইখলাসের সঙ্গে বলতে হবে। (মিরকাতুল মাফাতিহ, ১/৬)