ভারতীয়দের উদ্দেশে ১৪৫ নাগরিক
‘আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়ব, আপনারাও আপনাদের দেশে রুখে দাঁড়ান’
ঢাকা টুডে ২৪ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৪ পিএম
‘ভারতের জনগণের কাছে আমাদের আবেদন’ শিরোনামে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১৪৫ জন নাগরিক।
‘ভারতের জনগণের কাছে আমাদের আবেদন’ শিরোনামে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১৪৫ জন নাগরিক। বিবৃতিতে ভারতের জনগণের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘সাধারণ জনগণের জীবনের সংকট বিচার করলে দুই দেশের মধ্যে মূলত কোনো পার্থক্য নেই। আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক প্রবণতা আর শক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়ব, আপনারাও আপনাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন।’
আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে এই বিবৃতি পাঠানো হয়। ১৪৫ নাগরিকের পক্ষে বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ৷ ভারতের জনগণের উদ্দেশে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা এমন এক সংকটপূর্ণ সময়ে অবস্থান করছি, যখন ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক শোচনীয় অবস্থায় এবং কিছু ভারতীয় উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির ক্রমাগত উসকানি এ অঞ্চলের জনগণের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে চিড় ধরাতে চাইছে। ভারতের জনগণ ও ভারত সরকারকে আমরা কখনোই এক করে দেখি না। আমরা জানি, ভারতের জনগণও হিন্দুত্ববাদী শক্তি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়ছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লড়াই করে তার পতন ঘটিয়েছি আমরা। জুলাই-আগস্টের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের সময় আপনারা আমাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করেছেন। আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আপনাদের আর আপনাদের আন্দোলনে আমাদের সংহতি প্রকাশের ধারাবাহিকতা অনেক দিনের।’
সাম্প্রদায়িকতাকে ভারতীয় উপমহাদেশের বড় সমস্যা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রদায়িকতা মানুষে মানুষে বিভাজন ঘটায়, ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি করে বিভেদ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজের অধিকার, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, নারীর প্রতি সহিংসতা এবং জনজীবনের আরও অনেক জলজ্যান্ত সমস্যা আড়াল করার জন্য উপমহাদেশের প্রত্যেক শাসকগোষ্ঠীই সাম্প্রদায়িকতার হাতিয়ার কাজে লাগিয়েছে। তারা এই কৌশল খাটিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘু উভয় জনগোষ্ঠীর ভোট পাওয়াটা নিশ্চিত করতে চায়। বিশেষত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কালে সংখ্যালঘু জনগণের ওপর হামলার ঘটনা বারবার ঘটতে দেখা যায়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সারা বাংলাদেশে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, জমি দখল, মন্দির ভাঙচুর ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে এবং ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর সারা দেশে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের প্রেরণায় অনেক রাজনৈতিক দল হিন্দু ঘরবাড়ি ও মন্দিরা পাহারায় এগিয়ে আসে এবং সম্প্রীতির নতুন নতুন নজির স্থাপন করে। এ ছাড়া ভারতের জাতীয় পতাকা মাড়ানোর ঘটনায়ও এ দেশের গণতন্ত্রমনা মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু ভারতের অনেকগুলো সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ সম্পর্কে আসল তথ্য প্রচার করেনি, এখনো করছে না। ভারতের এক সংবাদমাধ্যম ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা রুটে একটি দুর্ঘটনাকে পরিকল্পিত হামলা বলে প্রচার করে। সেই প্রচারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে আক্রমণ হয়, বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়।
সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ভারত সরকার দুঃখ প্রকাশ করলেও মিথ্যা প্রচারণা বন্ধের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা চাই, বাংলাদেশের প্রকৃত ঘটনা যথাযথভাবে দেখানো হোক। এ ধরনের প্রচারণা থেকে যেকোনো দেশেই লাভবান হয় সাম্প্রদায়িক শক্তি, লাভবান হয় শাসকগোষ্ঠী।’