গভীর রাতে চার উপদেষ্টা যাওয়ার পর সড়ক ছেড়ে হাসপাতালে ফিরলেন আহতরা
ঢাকা টুডে ২৪ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ পিএম
বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটায় রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনের সড়কে যান অন্তর্বর্তী সরকারের চারজন উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার একজন সহকারী।
প্রায় সাড়ে ১৩ ঘণ্টা পর রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনের সড়ক থেকে হাসপাতালে ফিরেছেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা।
গতকাল বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের চারজন উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার একজন সহকারী সেখানে যান। তাঁদের কাছ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস পাওয়ার পর আহত ব্যক্তিরা হাসপাতালে ফিরে যান।
গতকাল বেলা একটা থেকে আগারগাঁও এলাকায় পঙ্গু হাসপাতাল ও পাশের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি ওই সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন। এই ব্যক্তিদের কারও এক পা নেই, কেউ হুইলচেয়ারে, আবার কারও চোখে ব্যান্ডেজ রয়েছে। তাঁরা একপর্যায়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেন। পরে হাসপাতালে ফিরে যেতে চারজন উপদেষ্টাকে সেখানে উপস্থিত হওয়ার শর্ত দেন।
সেই শর্ত অনুযায়ী উপদেষ্টারা না যাওয়ায় রাত ১২টার পর হাসপাতাল থেকে বিছানাপত্র এনে সামনের ওই সড়কে অবস্থান চালিয়ে যান আহত ব্যক্তিরা। কেউ শুয়ে, কেউ বসে সময় পার করতে থাকেন। এ অবস্থা চলার মধ্যে রাত আড়াইটার সময় সেখানে যান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় সহকারী (স্বাস্থ্য) হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. সায়েদুর রহমান।
উপদেষ্টারা ভুল স্বীকার ও দুঃখ প্রকাশ করেন। তাঁরা আহত ব্যক্তিদের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় সচিবালয়ে বৈঠকে বসার কথা বলেন। আহত ব্যক্তিদের প্রতিনিধিদলের যাওয়ার জন্য দুটি গাড়ি পাঠাবেন বলে জানান। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য একটি রূপরেখা তৈরি করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন।
প্রথমেই আহত ব্যক্তিদের উদ্দেশে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘এখন এখানে আপনাদের কথা শোনার মতো উপযুক্ত সময় নয়। আপনারা কাল বেলা দুইটার সময় সচিবালয়ে আসেন। সেখানে আলোচনার ভিত্তিতে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে। সেই রূপরেখা ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।’ এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু ব্যবস্থা না হওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হবে।’
এ পর্যায়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের ব্যর্থতা, আমাদের ভুল আছে। কিন্তু চেষ্টার দিক দিয়ে আমাদের ঘাটতি ছিল না। যেকোনো কারণেই হোক আমরা পারিনি। আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখুন, আমরা একটি কংক্রিট (সুষ্পষ্ট) রূপরেখা দেব, লিখিত দেব।’
নিজেদের দুর্বলতার কথা স্বীকার করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘একটা ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। বহু সমস্যা দেখা দিয়েছে। আসুন আমরা আলোচনার ভিত্তিতে একটা রূপরেখা তৈরি করি। সেটা ঠিকমতো বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য আপনারা একটা টিম করবেন।’
স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সহকারীর দায়িত্বে আসা মো. সায়েদুর রহমান আহত ব্যক্তিদের দেশের সেরা চিকিৎসা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একটা সুযোগ চাই। আমাদের একটা সুযোগ দিন। কোনো ব্যত্যয় হলে আমরা দায়িত্বে থাকব না।’
আর উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘আমরা কথা দিচ্ছি, আপনাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করব। না পারলে তখন যা ইচ্ছা করবেন, কোনো আপত্তি থাকবে না। তবে আপনাদের সুষ্ঠু চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হবে।’
এরপর আহত ব্যক্তিরা হাসপাতালে ফিরতে রাজি হন। তখন উপদেষ্টারা তাঁদের নিয়ে হাসপাতালে ঢোকেন। রোগীদের হাসপাতালের শয্যায় পৌঁছে দিয়ে পঙ্গু হাসপাতাল ও জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগীদের দেখে আজ ভোর সোয়া চারটার পর উপদেষ্টারা বাসার উদ্দেশে যাত্রা করেন।