Logo
Logo
×

লাইফস্টাইল

আফরোজা পারভীন পেলেন উদ্যোক্তা সন্মাননা

Icon

ঢাকা টুডে ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৫৮ পিএম

আফরোজা পারভীন পেলেন উদ্যোক্তা সন্মাননা

ছবি: উজ্জ্বলা

সৌন্দর্যসেবা খাতের ছোট উদ্যোক্তা থেকে মাঝারি সারির সোন্দর্যসেবা উদ্যোক্তায় পরিণত হওয়ার পাশাপাশি সৌন্দর্যসেবা খাতে নতুন উদ্যোক্তা ও সেবাপ্রদায়ক তৈরি ও তাদের পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় নিজেকে উন্নীত করেছেন রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন। তাইতো সম্প্রতি আইডিএলসি প্রথম আলো উদ্যোক্তা সন্মাননা পেলেন তিনি।

সৌন্দর্যসেবা বর্তমানে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের একটি অমিত সম্ভাবনাময় খাত। এই শিল্প বড় শহর ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এই খাতে ছোট পরিসরে কাজ শুরু করে এখন মাঝারি সারির সোন্দর্যসেবা উদ্যোক্তায় পরিণত হওয়ার পাশাপাশি এই খাতে নতুন উদ্যোক্তা ও সেবাপ্রদায়ক তৈরি এবং তাদের পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় রয়েছেন আফরোজা পারভীন। তারই ফলসরুপ তিনি পেলেন সম্মাননা।

কিন্তু এই সম্মননা একদিনে আসেনি। বরং দীর্ঘদিন ধরে লেগে থেকে সাফল্য করায়ত্ত করার ফলেই তিনি আজকে এই সম্মাননা পেয়েছেন। কোন সন্দেহ নেই, এই খাতের একজন সফল উদ্যেক্তা আফরোজা পারভীন। শুরুতে এককভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করেছেন। এরপর ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নিজের সৌন্দর্যসেবা প্রতিষ্ঠান রেড বিউটি স্টুডিও অ্যান্ড সেলুন।

তবে একথা অস্বীকার করা যাবে না, এই ধরণের সম্মাননা আরো কাজের শক্তি, সাহস ও প্রেরণা যোগায়। যেসব কাজ নিয়ে আমার সংশয় ছিলো, এখন সেগুলোও শেষ করতে পারবো বলে আশা করি, বলেছেন উজ্জীবীত আফরোজা।

এবারের এই অর্জন প্রসঙ্গে আফরোজার বক্তব্য, আসলে সম্মাননা ও স্বীকৃতি হয়তো সবাই আশা করে। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। তবে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমি শুধু আমার কাজকে ভালভাবে করতে চেয়েছি। কখনও ফিরে তাকাইনি। আইডিএলসি প্রথম আলো উদ্যোক্তা সন্মাননা পাওয়ার পর আমার একটা কথাই মনে হয়েছে, নিজের কাজ সঠিকভাবে করতে পারলে সম্মাননাস্বীকৃতি  ঠিকই তাকে খুঁজে নেবে।

আইডিএলসি প্রথম আলো উদ্যোক্তা সন্মাননা ছাড়াও তাঁর ঝুলিতে রয়েছে অনুপ্রেরণামূলক পরিবর্তনের জন্য এমজিএইচ গ্রুপ এবং কর্মক্ষেত্রে সফল নারী হিসেবে বেসিসের সম্মাননা।

এসবের বাইরে একজনের নাম না বললেই নয়, তিনি হচ্ছেন কানিজ আলমাস খান। আমি যখন উদ্যোক্তা হিসেবে পথচলা শুরু করি তখন তিনি আমার পরিবারকে বলেছিলেন। আপনারা সবসময় আফরোজার পাশে থাকবেন। তাহলেই সে নিজেকে অনন্য উচ্চাতায় নিয়ে যেতে পারবে। এভাবেই প্রাণিত হওয়ার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন আফরোজা।      

আফরোজা যোগ করেন, আমার সহকর্মীদের কথা না বললেই নয়; আমি যখন যেটা যেভাবে চেয়েছি তারা আমাকে সেভাবেই করে দিয়েছে। সহযোগিতা করেছে। এই টিম না থাকলে আমার পথচলা আরো অনেক কষ্টের ও ক্লান্তির হত।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এসব পণ্যের বাজারজাত করছেন তিনি। নতুন উদ্যেক্তাদের আরো বড় পরিসরে সহায়তা করতে আফরোজা পারভীন গড়ে তুলেছেন আরো দুটি প্রতিষ্ঠান উজ্জ্বলা ট্রাস্ট ও উজ্জ্বলা ফাউন্ডেশন। নিজের এই পথচলায় তিনি তাঁর সহকর্মী ও পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘শুরু থেকেই আমার পরিবার আমাকে সাপোর্ট দিয়েছে। এই কাজ করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে আমার সন্তানকে আমি বঞ্চিত করেছি। কিন্তু এর বিনিময়ে হয়তো আরো ৫টা সন্তান লাভবান হয়েছে। এটাই আমার অর্জন ও শান্তনা।

সৌন্দর্য সেবা ও এর প্রশিক্ষণেই থেমে থাকেননি আফরোজা পারভীন। গড়েছেন সৌন্দর্যপণ্যের নিজের ব্র্যান্ড 'উজ্জ্বলা কেয়ার'। উজ্জ্বলা কেয়ারের যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালে। যে ব্র্যান্ডের প্রতিটি পণ্য তৈরি হয় দেশীয় উপাদান থেকে। কারখানা গড়ে তুলেছেন নাটোরে। উজ্জ্বলা কেয়ারের আছে রূপচর্চা ও যত্নের নানা পণ্য। তালিকাও বলতে হবে দীর্ঘ। এর মধ্যে অ্যান্টিহেয়ার ফল হারবাল হেয়ার অয়েল, স্কিন লাইটেনিং বডি অয়েল, হারবাল শ্যাম্পু বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

নিজের প্রতিষ্ঠান উজ্জ্বলার পাশপাশি আফরোজা পারভীন প্রশিক্ষক হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্প, এসএমই ফাউন্ডেশন, জয়িতা ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে নারীদের রূপচর্চা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। দেশ-বিদেশের উন্নয়ন সংস্থার প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করছেন তিনি।

এই অভিযাত্রা সহজ ছিল যে ছিল না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে এসে আমার মনে হয় একা একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে শুধু কাজ করলে হবে না। আরো উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। শুরু থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। অনেক ধরণের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। আর এই পথচলায় উদ্যেক্তা হিসেবে জমেছে নানা অভিজ্ঞতা। এজন্যই নিজে এগিয়ে যাওয়া নয়, বরং আমার এতদিনের সঞ্চিত অভিজ্ঞতাকে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছি; চেয়েছি তাদেরও এগিয়ে নিতে।’

এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। বরং এসএমই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে দেশের বিভিন্ন জেলায় সৌন্দর্যসেবা প্রদায়কদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। এই অভিজ্ঞতাই তাঁকে এগিয়ে দেয় আরও একধাপ। সঙ্গে যোগ হয় আত্মবিশ্বাস। ফলে ২০১৭ সালে নিজের অভিজ্ঞতাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে প্রতিষ্ঠা করেন সৌন্দর্যসেবা প্রশিক্ষণকেন্দ্র উজ্জ্বলা। এ প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি নারীকে সৌন্দর্যসেবা-বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করেছে।


উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ৬৪ জেলাতেই আছে ছোটবড় বিউটি পারলার, স্যালন ও স্পা। বর্তমানে নিবন্ধিত পারলারের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ। এ ছাড়া পুরুষদের পারলার ও স্যালন আছে আনুমানিক পাঁচ লাখ। নারীদের পারলার, স্যালন ও স্পার পরিচালনায় উদ্যোক্তা থেকে সেবা প্রদায়ক মিলিয়ে রয়েছেন অন্তত ১০ লাখ নারী। ২০২০ সালের ৭ জুন এই শিল্প পেয়েছে শিল্প খাতের মর্যাদা। ফলে এই খাতটি হয়ে উঠেছে দারুণ সম্ভাবনাময়; যেখানে অবদান রাখছেন আফরোজা পারভীনের মত অনেকেই। তবে এদের মধ্যে অবশ্যই অগ্রগণ্য তিনি। কারণ বলতে গেলে সব জেলাতেই আছে তাঁর কাছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা। বলতে গেলে গোটা বাংলাদেশের সৌন্দর্যসেবা খাতকে এগিয়ে নিতে তিনি উল্লেখ্যযোগ্য, প্রশংসনীয় ও অনুসরণীয় ভূমিকা রেখে চলেছেন।

ঢাকা টুডের একটি প্রকাশনা

অনুসরণ করুন