যে কোনো উৎসবে শাড়ি ছাড়া নারীর সাজগোজ যেন অপূর্ণই থেকে যায় মডেল: টিনি গাঙ্গুলি
শাড়িতে বাঙালি নারী ফিরে পায় আসল রুপ। ‘ঘরেতে এল না সে তো, মনে তার নিত্য আসা-যাওয়া- পরনে ঢাকাই শাড়ি কপালে সিঁদুর।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ দুটি লাইন হাজার বছরের বাঙালি নারীদের সহজ সাবলীল রূপ। আর শাড়ি ছাড়া বাঙালি নারীকে কোন কালে কল্পনা করা যায় না।
বাঙালি নারীর জন্য শাড়ি মানেই হচ্ছে এক সৌন্দর্যের ব্যাকরণ। ‘শাড়ি’ শব্দটি উচ্চারণ মাত্রই বাঙালি রমণীর মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। যে কোনো উৎসবে শাড়ি ছাড়া নারীর সাজগোজ যেন অপূর্ণই থেকে যায়। বাঙালি নারীর সবচেয়ে নান্দনিক পোশাক শাড়ি। আবহমান কাল থেকে শাড়ি বাঙালি নারীর অলঙ্কার আর অহংকার। দেখতে দেখতে চলে এলো পবিত্র ঈদুল আজহা। আর উৎসব যখন ঈদ, তখন নারীর সাজে শাড়ির কদর সবার আগে। শুধু ঈদ নয়, ঋতুভেদে ঘরোয়া বা বাইরের আয়োজনে শাড়ি থাকে সবার আগে পছন্দের তালিকায়।
ইতিহাসের পাতা উলটালে শাড়ির প্রচলন মিলবে খ্রিষ্টপূর্ব তিন হাজার বছর আগে থেকে। সে সময় শাড়ি ছিল নানা নামে পরিচিত। মসলিন শাড়ি ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য। সময়ের পালাবদলে যুক্ত হয়েছে আরও বেশ কিছু নতুন নাম। কাতান, বেনারসি, জামদানি, মণিপুরি কিংবা তাঁতের শাড়ি এর মধ্যে অন্যতম।
উৎসব আয়োজনে শাড়ি থাকে নারীদের পছন্দের পোশাকের তালিকায় সবার প্রথমে। জীববৈচিত্র্যের মতো লক্ষ্য করা যায় বস্তু-বৈচিত্র্য। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলেই হারিয়ে যেতে হয় ইতিহাসের পাতায়। শাড়ি সেখানে ব্যতিক্রমী এক নাম। সেই পুরাকাল থেকে এখনও বজায় রেখেছে নিজের গরিমা। বাঙালি নারী দেহে যা এক অবিসংবাদী পরিধেয়।
হাল ফ্যাশনে নারীরা পাশ্চাত্যের ডিজাইনের দিকে ঝুঁকে থাকলেও বিয়ে বা নানা উৎসবে তারা শাড়িতে নিজেকে সাজাতে ভালোবাসে। তবে ব্যস্ত জীবনের বাহানাতে শাড়ি পরার চেয়ে সালোয়ার কামিজ বা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরার ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়।
৯০ দশকের আগেও এদেশের নারীরা বিয়ের পর সালোয়ার কামিজ বা অন্য কোন পোশাক পরবে তেমনটা চিন্তা করতে পারত না। তার ও আগের সময়ের দিকে দেখা গেছে খুব অল্প বয়সেই নারীরা শাড়ি পরত। যার প্রমাণ মিলে কাব্য সাহিত্যে। সে সময়কার সমাজের নারীদের ফ্রক ছেড়েই শাড়ি পরার রীতি ছিল।
সময়ের প্রেক্ষাপটে বাঙালি নারীর বসনে এসেছে নানা সাজ, বিভিন্ন রূপ। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের সাজসজ্জা এবং পোশাকে এসেছে পাশ্চাত্যের ব্যাপকতা। তবু শাড়িতেই সবচেয়ে সুন্দর বাঙালি নারী। আর এই সত্য অনুধাবনেই যেনো ঐতিহ্যবাহি পোশাকটির প্রতি আকর্ষণের কমতি নেই নতুন প্রজন্মের নারীদেরও।
বাঙালীদের মেয়েদের বার্হ্যিক সৌন্দর্য সবচেয়ে ভালো ভাবে প্রকাশ পায় শাড়িতেই। বাঙালী কালচার অনুযায়ী শাড়ি পরার ধরণ দু-প্রকার। একটি হল সাধারণ ভাবে কুচি করে আর অন্যটি হল আটপৌরে করে। সাধারণ ভাবে সামনে কুচি করে শাড়ি পরার ধরনটাই বর্তমানে বহুল প্রচলিত। এইভাবে শাড়ি পরার চল প্রথম শুরু হয় ঠাকুর পরিবার থেকে। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনী দেবী এই স্টাইলে শাড়ি পরতেন। এর পুর্বে আটপৌরে করে শাড়ী পরাটাই ছিল বাঙালীদের শাড়ি পরার একমাত্র ধরন। এছাড়াও ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে ভিন্ন পদ্ধতিতে শাড়ি পরার চল রয়েছে।
বাঙালির কারণ-অকারণে আবেগ ধারণ করে ওই শাড়িই- শাড়ি ছাড়া আর কিছু নয়। শাড়ি তাই হারিয়ে যায় না। হারিয়ে যেতে পারে না বলে শাড়ি ফিরে ফিরে আসে নানা রূপে। নতুন আঙ্গিকে, নতুন নকশায়। পুরানো তাঁতে ফিরে আসে প্রাণ।
মডেল: টিনি গাঙ্গুলি