ব্রেকিং |
৪ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাৎ
যুক্তরাজ্যে টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ
ঢাকা টুডে ২৪ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০২ পিএম
যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক
বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্প থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। অভিযোগের তদন্তে নাম এসেছে শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে ও যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকেরও।
আর এই ঘটনায় যুক্তরাজ্যে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা। মূলত দেশটির মন্ত্রিপরিষদ অফিসের ন্যায় এবং নৈতিকতা দল তাকে এই জিজ্ঞাসাবাদ করে। রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র সানডে টাইমস।
ব্রিটিশ এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বাংলাদেশে একটি পারমাণবিক শক্তি প্রকল্প থেকে নিজের পরিবারকে প্রায় ৪ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাৎ করতে সহায়তা করার অভিযোগে মন্ত্রিপরিষদ অফিসের ন্যায় ও নৈতিকতা দল মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার মন্ত্রিসভার সদস্য, তিনি ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাজ যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া।
তবে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তার খালা ও বাংলাদেশের সদ্য ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য রাশিয়ার সাথে একটি দুর্নীতির চুক্তিতে সাহায্য করার অভিযোগ রয়েছে।
অবশ্য টিউলিপ সিদ্দিককে গত বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে এই খবরটি সামনে আসে রোববার। অভিযোগ অনুযায়ী, রূপপুরের এই প্রকল্প থেকে ৩.৯ বিলিয়ন (৩৯০ কোটি) পাউন্ড সরিয়ে নেয় শেখ হাসিনার পরিবার ও তার মন্ত্রীরা।
???? NEW: Tulip Siddiq questioned by officials over £4bn fraud allegations.
— The Times and The Sunday Times (@thetimes) December 22, 2024
Labour minister quizzed over accusations that she helped Sheikh Hasina, the deposed prime minister of Bangladesh, to broker a corrupt deal with Russia ⬇️https://t.co/MQg1WbmaCE
সানডে টাইমস রোববার তাদের প্রতিবেদনে জানায়, টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের বন্ধু এবং তার নির্বাচনী এলাকার পাশের আসন হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেইট আসনের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ সামনে আসার পর টিউলিপ সিদ্দিক দেশটির মন্ত্রিপরিষদ অফিসের ন্যায় এবং নৈতিকতা দলের (পিইটি) প্রতিনিধির সাথে বৈঠকে যোগ দিতে সম্মত হন। গত বৃহস্পতিবার পিইটি’র ওই কর্মকর্তা টিউলিপ সিদ্দিকের অফিসে যান। পরে ওই কর্মকর্তার কাছে ১০ বিলিয়ন পাউন্ডের রূপপুর প্রকল্পের দুর্নীতির সাথে তার জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে জবাব দেন টিউলিপ।
প্রসঙ্গত, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি ২০১৩ সালে বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সাথে একটি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিলেন, যেখানে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছিল। মূলত টিউলিপ সিদ্দিকের খালা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন যে ব্যাপক তদন্ত শুরু করেছে তারই আওতায় পড়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক।
দুদক শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানাসহ তাদের পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য এবং আওয়ামী লীগ সরকারের জ্যেষ্ঠ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। বাংলাদেশে মোট ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনাকে স্বৈরশাসক হিসেবে দেখা হয়, তার সরকার কঠোরভাবে ভিন্নমত দমন করত।
ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছাড়ার পর থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের অভিযোগ তুলছে। জুলাই-অগাস্টে আন্দোলন চলাকালে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে’ জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। হাজারেরও বেশি আন্দোলনকারী নিহত হয় ওই আন্দোলনে।
হাসিনার পাশাপাশি সাবেক সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-সহ আরও ৪৫ জনের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, যাদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
উল্লেথ্য, টিউলিপ সিদ্দিক ২০১৫ সালে উত্তর লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেইট আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই আসনটি প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের আসন হবর্ন অ্যান্ড সেন্ট প্যানক্রাসের লাগোয়া।