এশিয়াস আইকন অ্যাওয়ার্ড অর্জন
আশিকের এগিয়ে চলা
ঢাকা টুডে ২৪ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৭ পিএম
সামাজিক কাজে নিরলস ভুমিকা ও যুব উন্নায়নে অগ্রণী ভুমিকা রাখায় বাংলাদেশের তরুণ একেএম আশিক আহমেদ অর্জন করলেন এশিয়া'স আইকন অ্যাওয়ার্ড।
অ্যানিলেপ ফাউন্ডেশন ইন্টারন্যাশনাল এর জুরি কমিটি আশিককে মনোনীত করে এই অ্যাওয়ার্ডর জন্য। বিভিন্ন সেক্টরে তরুণ আশিকের অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও কাজ তাকে এ সাফল্য এনে দেয়। দেশজুড়ে তরুণদের উন্নয়ন ও সবলীকরণ লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন আশিক। তাঁর কাজের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে যুব নীতি, সামাজিক উন্নয়ন এবং নেতৃত্ব কর্মসূচিগুলিতে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে অ্যানিলেপ ফাউন্ডেশন ও শ্রীলংকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সাইক্লোন ইয়ুথ হেবেন এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানটির আয়োজনে করে। শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলোম্বোর বন্দেরনায়েক মেমোরিয়াল আন্তর্জাতিক সম্মেলন হলে অনুষ্ঠিত এক ঝমকালো অনুষ্ঠানে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। শ্রীলংকার সাবেক রাষ্ট্রপতি মৈত্রীপাল সিরিসেন এর উপস্থিতিতে পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের গভর্নর সেন্থিল থন্ডামান অ্যাওয়ার্ড হস্তান্তর করেন আশিকের কাছে। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন শ্রীলংকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সার্ক কালচারাল সেন্টার এর অতিরিক্ত পরিচালকসহ ১৫টি দেশের আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরা। আশিক বলেন, এই অর্জন আমার কাজের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং গুরুত্বকে তুলে ধরেছে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে সামাজিক কার্যক্রম এবং যুব নেতৃত্ব সম্পসারণের জন্য আমি মনোনীত হই।
যেভাবে হলো শুরু
প্রতিটি শিশুর জন্য তার পরিবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশিক বলেন, আমার প্রথম সামাজিক কাজের অনুপ্রেরণা বাবার থেকে। সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য থাকাকালিন দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজের জীবন বাজি রাখার অঙ্গিকার নিয়েছিলেন। দেশের জন্য তার নিঃস্বার্থ সেবা আমাকে সবসময় অনুপ্রাণিত করেছে। শৈশব থেকেই আমি দেখেছি, তিনি কীভাবে দেশ ও সমাজের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তার এই দেশপ্রেম ও সামাজিক দায়বদ্ধতাই আমাকে সামাজিক কাজে এতটা নিষ্ঠাবান করে তুলেছে। তারপর শিক্ষা জীবনে বেড়ে ওঠার পাশাপাশি বিভিন্ন সেবাধর্মী কাজে সংযুক্ত হওয়া এবং তারই ধারাবাহিকতায় এই স্বীকৃতি।
আশিক ২০১৭ সালের দিকে টাঙ্গাইল এসোসিয়েশন অব কুয়েট নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে যুক্ত হন, যেটি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত টাংগাইলের শিক্ষর্থীদের সংগঠন। এর পর থেকে স্বেচ্ছাশ্রম ও মানবিক বিভিন্ন কাজের প্রতি তার আগ্রহ বৃদ্ধি পেতে থাকে। বাংলাদেশ স্কাউটস, ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ, লিও ক্লাব ইন্টারন্যাশনালসহ একাধিক সংগঠনে সমাজ উন্নয়ন ও মানবতার ব্রত নিয়ে কাজ করছেন আশিক। এছাড়া বিতর্কসহ নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত আশিক। বর্তমানে আশিক অধ্যয়নরত আছেন বাংলাদেশ ইউনিভারসিটি অফ প্রফেশনালস এর আর্মি -আইবিএ তে।
এশিয়াস আইকন অ্যাওয়ার্ড
অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, এটি কোন ব্যাক্তির একক সন্মান নয়। এটি পুরো দেশের সামগ্রিক মানুষের অর্জন। আমি আমার প্রচেষ্টাগুলো অব্যাহত রাখতে চাই। একই সঙ্গে আমার এই অ্যাওয়ার্ডটি উৎসর্গ করতে চাই ২০২৪ এর ছাত্র -জনতার অভূত্থানের যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি। তাদের আত্মত্যাগের কাছে আমার এই অর্জন খুবই সামান্য।
সামাজিক প্রকল্পে তার নেতৃত্বের পাশাপাশি অশিক বাংলাদেশে তরুণদের জীবনমান উন্নত করার জন্য বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা করেছেন। আশিক বর্তমানে থ্রী জিরো ক্লাবের কি-পার্সন হিসেবে কাজ করছে । থ্রী জিরো ক্লাব মূলত শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বজুড়ে আলোচিত তিন শূন্য তত্ত্ব, যার উদ্যেশ্য হচ্ছে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সেবায় নতুন কিছু প্রকল্প নিয়ে সংগঠনটির কাজ চলমান রয়েছে। আশিক লিও ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল, গ্লোবাল ইয়ুথ পার্লামেন্ট, বাংলাদেশ স্কাউটসের মতো সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবায় নিজেকে যুক্ত রাখতেন সবসময়।
পেয়েছেন একাধিক অ্যাওয়ার্ড
আশিকের অর্জনের ঝুলিতে আরো রয়েছে গ্লোবাল ইয়ুথ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড। স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক কাজে নেতৃত্ব ও যুব সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় সর্বকনিষ্ঠ বাংলাদেশি হিসাবে গ্লোবাল ইয়ুথ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন আশিক আহমেদ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যুবকদের ইতিবাচক কাজের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়াও আশিক পেয়েছেন মাও সেতুং ইয়ুথ ইনভেনশন পুরস্কার ও ন্যাশনাল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড।
ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
এশিয়া'স আইকন পুরস্কারটি আমাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। এ সম্মাননা আমার কাজের গতি আরো বাড়িয়ে দিবে, বলছিলেন আশিক। তিনি এর সঙ্গে যোগ করে বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নেতৃত্বের গুণাবলী বিকশিত করতে, সমাজের উন্নয়নে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আজীবন কাজ করে যেতে চান তিনি। থ্রি জিরো ক্লাবের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ করতে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বাংলাদেশের উদ্দমী তরুণ আশিক আহমেদ।