আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, ব্যবসায়ীরা বিপদে
ঢাকা টুডে ২৪ ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২০ এএম
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) বাণিজ্য সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। আজ শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে
রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁরা গাড়ির ইঞ্জিন হলেও শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা হচ্ছেন সেই যানের চাকা। কিন্তু চাকা যেন আর চলছে না। না চলার কারণ হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম খারাপ অবস্থা। বিভিন্ন জায়গায় মাস্তানি ও চাঁদাবাজি চলছে।
রাজধানীর একটি হোটেলে আজ শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসরকারি খাতের পূর্বাভাস: প্রত্যাশা ও অগ্রাধিকার’ শীর্ষক বাণিজ্য সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা এ কথাগুলো বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, তিন-চার মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সফল হয়নি অন্তর্বর্তী সরকার। গত শুক্রবারও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে একজন ব্যবসায়ীকে পেটানো হয়েছে। চলছে মামলা–বাণিজ্য। ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকলেই বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে হত্যা মামলার আসামি। ঋণের সুদের হার বাড়ছে। এসব নতুন সমস্যার সঙ্গে গ্যাস-সংকট, প্রায় সব ক্ষেত্রে ঘুষ-দুর্নীতি, বিচারে দীর্ঘসূত্রতার সমস্যাগুলো রয়েই গেছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পুরোপুরি উন্নতি হয়নি এখনো। জ্বালানি সমস্যায় শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসা চালিয়ে নেওয়াই কঠিন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ৩ থেকে ৪ মাসে সালেহউদ্দিন সব ঠিক করে দেবেন—এমনটা আশা করা ঠিক নয়। সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো অবশ্য যথার্থ। অর্থনীতি স্থিতিশীল না হলে অন্য সূচকগুলো সফল হয় না। তবে ক্ষয় হয়ে যেতে শুরু করা অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করেছে এবং আরও ক্ষয় হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘(অর্থনীতির) শরীরে যে ক্ষত হয়েছে, তা প্যারাসিটামল দিয়ে সারবে না। তাই কিছু কঠিন অস্ত্রোপচারে যেতে হবে।’
‘বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে’
বাণিজ্য সম্মেলনে নির্ধারিত আলোচক হিসেবে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুক্তাদির বলেন, ব্যবসায়ী সমাজের কঠিন সময় যাচ্ছে। কারণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। এটি বন্ধ করতে হবে। চোখ বন্ধ না করার পরিবর্তে বরং চোখ খোলা রেখে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের মনোযোগ দেওয়া দরকার।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী বলেন, দেশের এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা। তাহলে ব্যবসা অনেক এগিয়ে যাবে।
ব্যস্ততার কারণে সম্মেলনের মাঝামাঝি পর্যায়ে অর্থ উপদেষ্টা চলে গেলেও শেষ পর্যন্ত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, সরকার চলমান নৈরাজ্য চায় না। শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি হলেও গুটিকয় নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আশ্বস্ত করছি, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা। সরকার এ বিষয়ে অনেক বেশি সংবেদনশীল।
শিল্পমালিকদের উদ্দেশে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক জায়গায় শিল্পমালিকেরা সমস্যাগুলো থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের অনুরোধ করব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আপনারাও যুক্ত হন। আপনারা সরে এলে আগুনে ঘি ঢালার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।’
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে সমস্যার কথা তুলে ধরেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরী বলেন, ‘দেশে ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতি হয়েছে। আর আইন মেনে ব্যবসা করতে গেলে প্রতি পদে বাধা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অথচ আইন না মেনে ব্যবসা করলে যেন সব ঠিক আছে। কিন্তু আমরা তো তা শিখিনি।’
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহমান বাণিজ্য উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা ইঞ্জিন, আমরা চাকা; কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ছাড়া আমরা চলতে পারব না।’