ফ্লোর প্রাইসের ওপরে থাকা বেশির ভাগ শেয়ারেও পতন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৪, ১২:৪৪ এএম
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড ৩৯৬টি। ছবি: সংগৃহীত
তালিকাভুক্ত কোম্পানির সব শেয়ারের ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস বা শেয়ারদরে সর্বনিম্ন দরসীমা প্রত্যাহারের পর গত দুই মাসে ৩১০ কোম্পানি বা ৭৯ শতাংশ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর কমেছে। এর মধ্যে ফ্লোর প্রাইসে পড়ে থাকা ২১৮ শেয়ারের মধ্যে ১৯১টির বা ৭৮ শতাংশের এবং গত ১৮ জানুয়ারি ফ্লোর প্রাইসের ওপরে থাকা ১৭৪ শেয়ারের মধ্যে ১১৯টি বা ৬৮ শতাংশ দর হারিয়েছে।
বর্তমানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড ৩৯৬টি। এর মধ্যে ৬টিতে এখনও ফ্লোর প্রাইস কার্যকর আছে। এগুলো হলো– ইসলামী ব্যাংক, খুলনা প্রিন্টিং, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, শাহজীবাজার পাওয়ার, বিএসআরএম লিমিটেড ও বেক্সিমকো লিমিটেড। এ ছাড়া নতুন তালিকাভুক্ত চার শেয়ারের দর প্রথম দিনের তুলনায় বেশিতে কেনাবেচা হচ্ছে।
অব্যাহত দরপতনের মুখে সর্বশেষ দফায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ হয়েছিল ২০২২ সালের ২৮ জুলাই। দেড় বছর পর গত ১৮ জানুয়ারি তা প্রত্যাহার হয়, যা কার্যকর হয় ২১ জানুয়ারি। সর্বশেষ লেনদেন মূল্যের হিসাবে ফ্লোর প্রাইসে পড়ে থাকা শেয়ারগুলোর মধ্যে ৯৯টির ২০ থেকে ৫২ শতাংশ পর্যন্ত পতন হয়েছে।
ব্রোকারেজ হাউস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যখন অধিকাংশ শেয়ারের দর কমেছে, তখন সূচকও নিম্নমুখী হয়। এর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ছিল সব বিনিয়োগকারীর মধ্যে। ফলে ফ্লোরে থাকা বা এর ওপরে কেনাবেচা হওয়া অধিকাংশ শেয়ার দর হারিয়েছে। একই সময়ে জেড ক্যাটেগরি ইস্যুতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার একের পর এক স্ববিরোধী সিদ্ধান্তের প্রভাব ছিল। আবার বিদেশিদের শেয়ার বিক্রির চাপ, ব্যাংক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির খবর, ব্যাংকের সুদহার বৃদ্ধিসহ নানা ইস্যু একবারে জড়ো হওয়ার প্রভাবে দরপতন হয়েছে।
ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের কারণে যেসব শেয়ার সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে, তার শীর্ষে আছে জিএসপি ফাইন্যান্স ও আইপিডিসি। এই দুই কোম্পানির দরপতন হয়েছে ৫১ থেকে ৫২ শতাংশ। জিএসপি ফাইন্যান্সের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৩০ টাকা ৩০ পয়সা। গত ৩০ জানুয়ারি এর দর ১৩ টাকা ২০ পয়সায় নামে। ওই দিন থেকে ফের দর বেড়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি ২১ টাকা ৬০ পয়সায় ওঠে। এরপর ক্রমাগত দর হারিয়ে গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ সাড়ে ১৪ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে।
একই চিত্র দেখা গেছে আইপিডিসির শেয়ারে। ফ্লোর প্রাইস ৫৭ টাকা ৬০ পয়সা থেকে টানা সাত দিনের পতনে এর দর সাড়ে ৩১ টাকায় নেমেছিল। ফের কিছুটা দর বেড়ে ১১ ফেব্রুয়ারি ৩৯ টাকা ৬০ পয়সায় ওঠে। ক্রমাগত দর হারিয়ে সর্বশেষ ২৭ টাকা ৯০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে শেষ দুই দিন দর বেড়েছে। অপেক্ষাকৃত ভালো শেয়ার হিসেবে বিবেচিত এসিআই লিমিটেডের ৪০ শতাংশ, জেএমআই সিরিঞ্জেসের ৩৯ শতাংশ, ইউনাইটেড পাওয়ারের ৩৬ শতাংশ, ন্যাশনাল লাইফ ও সাবমেরিন কেবলসের ৩৫ শতাংশ, তিতাস গ্যাসের ৩৪ শতাংশ, ওয়ালটনের ৩২ শতাংশ, রেনেটার ৩১ শতাংশ, ডেল্টা লাইফ ও ডিবিএইচের ২৬ শতাংশ দরপতন হয়েছে।
এদিকে গত ১৮ জানুয়ারি প্রত্যাহারের দিনে যে ১৭৪ শেয়ার ফ্লোর প্রাইসের ওপরে কেনাবেচা হচ্ছিল, সেগুলোর মধ্যে ২০ থেকে ২৩ শতাংশ দরপতন হয়েছে ১০টির। এগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ২৩ শতাংশ দরপতন হয়েছে আজিজ পাইপসের। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের দিনে শেয়ারটি ১১৪ কোটি ২০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার এ শেয়ারের দর ৮৭ টাকা ৬০ পয়সায় নেমেছে। এর ফ্লোর প্রাইস ছিল ৮২ টাকা ৭০ পয়সা। এ ধরনের আরও যেসব শেয়ার গত দুই মাসে অনেক দর হারিয়েছে, তার মধ্যে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, দেশবন্ধু পলিমার, সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ, মুন্নু সিরামিক, মনোস্পুল পেপার, শমরিতা, সন্ধানী লাইফ, এমারেল্ড অয়েল, সি পার্ল, আরএসআরএস, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, পেপার প্রসেসিং, বিকন ফার্মা, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, মীর আকতার উল্লেখযোগ্য। এসব শেয়ারের দর কমেছে ১৫ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত।
এমন দরপতন চিত্রের বাইরে কিছু শেয়ারের দর এ সময়ে বেড়েছে। যেমন– সর্বাধিক ৭০ শতাংশ দর বেড়েছে আফতাব অটোমোবাইলসের। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের দিনে শেয়ারটি ২৯ টাকায় কেনাবেচা হয়েছিল। এরপর ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় টানা বেড়ে শেয়ারটির দর সাড়ে ৬৪ টাকায় ওঠে। এ ছাড়া সেন্ট্রাল ফার্মার ৬১ শতাংশ, সিটি জেনারেলের ৫২ শতাংশ, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের ৪৯ শতাংশ, ফু-ওয়াং সিরামিকের ৪৬ শতাংশ, খান ব্রাদার্স পিপির ৪১ শতাংশ এবং ফাইন ফুডসের ৩৩ শতাংশ দর বেড়েছে।