গরু কেনার টাকা হারিয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর। ছবি: সংগৃহীত
বাসে পান খাইয়ে অচেতন করে এক গরু ব্যবসায়ীর ১৮ লাখ টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছে ‘শ্যামলী পরিবহন’ বাসের সুপারভাইজার প্রদীপের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বাসযাত্রী মো. জাহাঙ্গীর গতকাল শনিবার পাবনা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আকবর আলী মুন্সীর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাসের সুপারভাইজার প্রদীপ।
এর আগে সোমবার (১৮ মার্চ) চট্টগ্রামের বাঁশখালী হতে পাবনার পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগেই এ ঘটনা ঘটে। পরে তাঁকে অচেতন অবস্থায় ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে শনিবার তাঁর জ্ঞান ফিরলে রাতে পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দেন। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম সেই অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেন।
অভিযোগে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে পাবনায় গরু কিনতে যাওয়ার পথে বাসের মধ্যেই তাঁকে অচেতন করে প্রায় ১৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী গরু ব্যবসায়ীর অভিযোগ শ্যামলী পরিবহনের সুপারভাইজার যাত্রাপথে পান খাইয়ে তাঁকে অচেতন করে হাতিয়ে নেন ওই টাকা। এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
গরু ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর জানান, চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে দীর্ঘ এক যুগ আগে থেকেই প্রতি সোমবার গরু কেনার জন্য পাবনার অরনখোলা হাটে যান তিনি। আর নিয়মিত যাতায়াত করায় শ্যামলী পরিবহন বাসটির স্টাফদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক হয়।
জাহাঙ্গীরের অভিযোগ, দীর্ঘ এক যুগ চলার পথে এতদিন কোনো সমস্যা না থাকলেও হঠাৎ করেই গত সোমবার (১৮ মার্চ) পড়তে হয় বিপাকে। ১৮ লাখ টাকা মাজায় বেঁধে সেদিন রাত ৮টার দিকে ৮ নাম্বার শ্যামলী পরিবহন বাসের টিকেট কেনেন তিনি ও তাঁর রাখাল জসিম উদ্দীন। এ সময় রাখালের কাছেও ছিল ৩ লাখ টাকা। বাসের শ্যামলী পরিবহন বাসটির সুপারভাইজার প্রদীপ তাঁদের ৪ নাম্বার শ্যামলী পরিবহন বাসে তুলে দেন।
বাসটি পাবনায় পৌঁছে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে সুপারভাইজার প্রদীপ দুজনকেই দুটি পান খেতে দেন। এ সময় ভুক্তভোগীরা পান খেতে থাকলে বাসটির সুপারভাইজার প্রদীপ এসে তাদের ঘুমাতে বলেন। আগামীকাল গরমের মধ্যে সারাদিন গরু কিনবেন– এই বলে তাঁদের বিশ্রাম নিতে বলেন। এরপরের ঘটনা আর কিছুই মনে নেই জাহাঙ্গীরের।
এরপর পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন শ্যামলী গ্যাস পাম্পের পেছনের একটি জায়গায় পড়ে আছেন তিনি। তাঁর কাছে থাকা ১৮ লাখ টাকা আর নেই। তাঁর দাবি, কোমরে বেঁধে রাখা ১৮ লাখ টাকা না থাকলেও পকেটে থাকা ১০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে তাঁর রাখালের কাছে থাকা তিন লাখ টাকাও অক্ষত রয়েছে।
এদিকে পান খাওয়ানোর বিষয়সহ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাসটির অভিযুক্ত সুপারভাইজার প্রদীপ। তিনি বলেন, ‘আমি কাউরে কোনো চা অথবা পান খাওয়াইনি। কোনো যাত্রীকে কোনোদিন পানিও খাওয়াইনি। এসব মিথ্যা বানোয়াট কথা।’
তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’