Logo
Logo
×

সারাদেশ

চলতি মাসে শৈত্যপ্রবাহের আভাস

Icon

ঢাকা টুডে ২৪ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৪০ এএম

চলতি মাসে শৈত্যপ্রবাহের আভাস

চলতি জানুয়ারিতে ১-২টি তীব্র ও ২-৩টি মাঝারিসহ ৫টি শৈত্যপ্রবাহের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

মধ্য পৌষে এসে উত্তুরে হিমেল হাওয়ায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। গায়ে হিম ধরানো শীতে কাবু মানুষ। স্বস্তিতে নেই প্রাণিকুলও। গত তিন দিন ধরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত, এমনকি কোথাও কোথাও বিকাল পর্যন্ত কুয়াশায় চারপাশ ঢেকে থাকছে। ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখাও মিলছে না। এদিকে চলতি জানুয়ারিতে ১-২টি তীব্র ও ২-৩টি মাঝারিসহ ৫টি শৈত্যপ্রবাহের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তা ছাড়া বঙ্গোপসাগরে একটি থেকে দুটি লঘুচাপের কথাও জানানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে বলেও আভাস দিয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ৩১ ডিসেম্বর তথা ১৬ পৌষ থেকে উত্তুরে হিমেল হাওয়া শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘন কুয়াশা। কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের আলো মাটি পর্যন্ত পৌঁছতে পারছে না। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩ থেকে ৭ ডিগ্রি পর্যন্ত কমেছে। আর সর্বনিম্ন ৩-৪ ডিগ্রি পর্যন্ত কমেছে। 

এদিকে ঘন কুয়াশার পরিমাণ বৃদ্ধি ও হিমেল বাতাসে রাজধানীতেও শীতের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। কোথাও কোথাও লোকজনকে কাঠ-খড় পুড়িয়ে আগুন পোহাতে দেখা গেছে। কাপড়ের দোকানগুলোয় বেড়েছে শীতের কাপড় বিক্রি। 

কেমন যাবে পুরো জানুয়ারি 

গতকাল বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জানুয়ারি মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস কেমন হবে তা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হয়। সভা শেষে এক মাসের পূর্বাভাসে জানানো হয়, এ মাসে দেশের পশ্চিম ও উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ১-২টি মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি) থেকে তীব্র (৪-৬ ডিগ্রি) এবং ২ থেকে ৩টি মৃদু (৮-১০ ডিগ্রি) থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্য বয়ে যেতে পারে। এ মাসে রাত ও দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি থাকতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্য কম থাকার কারণে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে। এ মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি ও ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশার পরিস্থিতি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এ কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। তা ছাড়া সারা দেশে স্বাভাকি অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ মাসে দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকতে পারে। তা ছাড়া দৈনিক গড় বাষ্পীভবন ১.৫০-৩.০০ মিলিমিটার হতে পারে। তা ছাড়া গড় সূর্য কিরণের সময় ৫-৭ ঘণ্টা থাকতে পারে। 

কেমন ছিল ডিসেম্বর

গত ডিসেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছিল। তার মধ্যে একটি নিম্নচাপে পরিণত হয়। নভেম্বরের শেষে ঘূর্ণিঝড় ফিনজালের প্রভাবে ১ ডিসেম্বর ও পরবর্তীতে ৯, ২০ ও ২১ ডিসেম্বর নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হয়েছে। সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে ২১ ডিসেম্বর সাতক্ষীরায় ৫ মিলিমিটার। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১ ডিসেম্বর সীতাকুণ্ডে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিসেম্বর তেঁতুলিয়ায় ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ৮ ডিগ্রি ও শূন্য দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। আর সারা দেশে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ৭ ডিগ্রি বেশি ছিল। 

অন্যদিকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। ঘুন কুয়াশার কারণে কোথাও কোথাও দিনের শুরুতে শীতের অনুভূতি বিরাজ করতে পারে। 

এদিকে প্রতিবেদকদের পাঠানো সংবাদে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। এতে সাধারণ শ্রমিক শ্রেণির মানুষ বিপাকে পড়েছে। বিশেষ করে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কাঁপছে রংপুর, বিপর্যস্ত জনজীবন

রংপুর অফিস জানায়, মধ্য পৌষে রংপুরে জেঁকে বসেছে শীত। দিনভর দেখা নেই সূর্যের। হিমেল হাওয়ায় হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। তীব্র শীতের কারণে কাজ না পেয়ে বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষ। শীতে নাকাল হয়ে পড়েছে শিশু-বৃদ্ধসহ নানা বয়সি মানুষ। ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি, কাশিসহ নানা রোগব্যাধি বাড়ছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, এমন পরিস্থিতি চলবে আরও দুই-তিন দিন। 

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আগামী দুই-তিন দিন এমন আবহাওয়া বিরাজ করবে। এরপর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। তবে ৯ জানুয়ারির পর থেকে তাপমাত্রা কমে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামার পূর্বাভাস রয়েছে। 

নওগাঁয় হিমেল বাতাসে কাবু জনজীবন

নওগাঁ প্রতিবেদক জানান, কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে হিমেল হাওয়ার দাপটে নওগাঁয় থমকে দাঁড়িয়েছে জনজীবন। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। নিদারুণ কষ্টে পড়েছে দিনমজুর, রিকশাচালক ও খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। গতকাল সকাল ৯টায় নওগাঁয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

বগুড়ায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা

বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় শীতের তীব্রতা বাড়ছে। গতকাল জেলায় মৌসুমের সর্বনিম্ন ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শীত বাড়ায় শিশু ও বয়স্করা কষ্ট পাচ্ছে। পাল্লা দিয়ে শীতজনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস বলছে, তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।

কাহিল পঞ্চগড়ের মানুষ

পঞ্চগড় প্রতিবেদক জানান, ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের পথঘাট। রাত থেকে ঘন কুয়াশায় ছেয়ে যাচ্ছে জেলার সড়ক-মহাসড়ক। রাতভর ঝরতে থাকে বৃষ্টির মতো কুয়াশা। ভোর থেকে ঘন কুয়াশার কারণে মহাসড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে দেখা গেছে। আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে মানুষজন। গতকাল সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

ঢাকা টুডের একটি প্রকাশনা

অনুসরণ করুন